• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য

বাড়তি টাকা ছাড়া মিলছে না কোনো সেবা

  • প্রকাশিত ০২ এপ্রিল ২০২৪

সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি:

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ভূমি অফিসে বাড়তি টাকা ছাড়া মিলছে না কোনো সেবা। উৎকোচ না দিলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয় সেবা প্রত্যাশীদের; এমন অভিযোগ উঠেছে ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, উপজেলার পৌর ভূমি অফিসের কামরুল ইসলাম, তালেবপুর ভূমি অফিসের আজাহার উদ্দিন, জামশার মাহমুদুল আজম নামজারি, খাজনা, তদন্তসহ বিভিন্ন ভূমি সংক্রান্ত কাজের জন্য হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। তারা এ অর্থ অফিসের পিয়ন ও বহিরাগত দালালদের মাধ্যমে নিচ্ছেন।

ভূমি অফিস এখন দালানের দৌরাত্ম্য ও ঘুষ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নামজারী, খাজনা, পর্চাসহ ভূমি সংক্রান্ত কোনো সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আর ঐসব কাজেই বাড়তি উৎকোচ দিতে হয় নায়েবকে।

এ দিকে পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে সরকারি জমি দখল করে দোকান ভাড়া দিয়ে খাচ্ছেন এক প্রভাবশালী। জানা স্বত্বেও রহস্যজনক কারণে জমি উদ্ধারে নীরব পৌর ভূমি কর্মকর্তা। নামজারী ফাইল ধরে নিরপেক্ষ তদন্ত করলে ঘুষ ও দুর্নীতির চিত্র বের হয়ে আসবে।

ভুক্তভোগী আংগারিয়া এলাকার রবি বলেন, আমার পৌরসভার আওতায় ভিটে বাড়ির মাত্র তিন শতাংশ জমি, ভূমি অফিসের গনি নামজারি করার শর্তে ৩ হাজার টাকা নেন। আরও টাকা চেয়েছিল, টাকা না দিতে পারায় আজ না কাল করে দুই বছর ধরে ঘুরাঘুরি করছে।

গোবিন্দলের মিলন নামে এক ব্যক্তি জানান, জমি ভোগদখলে আছি, সঠিক এ রিপোর্ট দিতে ১০ হাজার টাকা নেন পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, বিনোদপুর গ্রামের লুৎফা বেগম ও তার জায়ের কাছ থেকে ৪ শত চব্বিশ টাকার খারিজের জন্য প্রথমে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, দরকষাকষি করে ৮ হাজার টাকা নেন নায়েব কামরুল ইসলাম। কিন্তু খাজনা রশিদ দেন মাত্র চারশত চব্বিশ টাকার।

চর আজিমপুরের হযরত বলেন, আমার ৮ শতাংশ জমি নামজারি করতে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। আরও বেশি টাকা চেয়েছিল ভূমি ঐ অফিসার। তালেবপুর ইউনিয়নের জয়নগরের জহুরুল ইসলাম স্ত্রী বলেন ৪ শতাংশ জমি নাম জরি করতে তালেবপুর ভূমি অফিসে দিতে হয়েছে ৮ হাজার টাকা।

আরেক ভুক্তভোগী ভূমিহীন দিনমজুর রহমান বলেন, সরকার আমাকে একটু জমি দিয়ে ছিল তা এখনো বুঝে পাইনি। স্ত্রী-ছেলে সন্তান নিয়ে ২২ বছর ধরে অন্যের বাড়িতে বসবাস করি। ঐ জায়গাটা সার্ভে করে আমাকে বুঝাইয়া দেওয়ার কথা। জায়গাটি না বুঝাইয়া দিয়ে দিয়ে আজ না কাল বলে তালবাহানা করে হয়রানি করেন। এসিল্যান্ড অফিসের একজনকে দেই তিন হাজার টাকা আর নায়েব আজাহারকে ২৫শত টাকা দিয়েছিলাম। টাকা নেওয়ার পরেও আমার কাজটি করে দেননি।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক দালাল বলেন, তহুরা নামে এক নারীর ৪ শতাংশ জমি জমি নামজারী করতে হয় ১৬ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। চেয়েছিল পঁচিশ হাজার।

জামশা ইউনিয়ন আইয়ুব আলী বলেন, বর্তমান সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মাহামুদ আজমের অফিসে আমার নামজারি করতে ২০ হাজার টাকা লাগছে। এই টাকা অফিসের পিয়নের মাধ্যমে নিয়েছেন।

ছাত্রলীগ নেতা আসমান বলেন, আমি একটা ঘরের বাউন্ডারি করতে যাই, নায়েব সাহেব প্রথমে সরকারি হালুট বলে বাঁধা দেন। ৪ হাজার টাকা উৎকোচ নেওয়ার পর বাউন্ডারি করতে দেন।

সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আজাহার উদ্দিন বলেন, আমার অফিস সম্পন্ন ঘুষ মুক্ত। কোনো ধরনের অনিয়ম নেই। আমার প্রতি ব্যক্তিগতভাবে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এমন কথা বলছে অনেকেই।

মাহামুদুল আজম বলেন, এ আমি কোনো বাড়তি টাকা-পয়সা নেই না। পৌর ভূমি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, আমি বাড়তি কোনো টাকা-পয়সা নেই না, সঠিকভাবে কাজ করি, কাউকে হয়রানি করি না।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কোনোক্রমেই সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করার কারও নিয়ম নেই। যদি বাড়তি কেউ টাকা পয়সা গ্রহণ করেন তাহলে তদন্ত করে পাওয়া গেলে আইন গত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads